Sunday, September 6, 2009

বৃষ্টিপর্ব

জল ফুটছে করতলে, ঠোঁট ছুঁয়ে উড়ে গেছে মেঘ— সুন্দর! মনে করো আমরা যে পথ ধরে হেঁটেছি তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে দৃশ্যাবলি যত
বোবাস্মৃতি সেজে। তবু কেন যে ছুঁয়ে দেখার আগে বৃষ্টিপর্ব শুরু হলো
না অজল চোখে

পাত্রের গায়ে লেগে আছে তৃষ্ণা, বাকিটুকু শৈবালে-তোমার মুগ্ধতা
আড়ালে-আবড়ালে মেঘের কালে… অবাক হবার কিছুই নেই বেদনাত্ন চোখে, ভোররাতে হাত বাড়ালে যদি ঝড়ো হাওয়া ফিরে আসে পুর্নবার ডালে-ডালে। পাতায় তুলে রাখি ছায়া শুকনো জল দেই ঢেলে সামনে দাঁড়ালে জলে ঘাম পুড়ে করতলে তোমার চোখে শ্রাবণের ঢল নেমে এলে



কার স্পর্শে যেন মিশে যেত হাত; চুষে নিতে জল ম্লান চোখ দু’টি
মিশে যেত হাওয়ায়-আবহাওয়াপাড়ায়। উড়ু হাওয়া বলুক রোদের
তীব্রতা খেয়ে গেল কে? আর্দ্র হাত দুটি কার আয়ু গুনে রাখে মনে-
রোদ কুড়ানোর ছলে তুমি লুকোবে আজ কার খোঁপায়। যদি ফিরে
আসে ওই দুটি হাত কলঙ্কফুল গেঁথে আমি গুনে নেবো স্মৃতি একা পেলে


জলে স্বপ্ন লুকানো বলে ভাবিনি এতসব জল অবলম্বনে জেনেছি স্বপ্নফুল
কবে ফুটেছে ঝরেছে তুমি জেগে ওঠার আগে- তাই জল ছুঁতে ভয় হয়,
বসে থাকি পেখম মেলে— আমি জল কখনো জমতে দেব না আর্তচোখে
ঢল নেমে এলে শোকগাথা যতসব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেবো ছত্রাকে-শৈবালে

৩০শে জুলাই

আজ তোর জন্মদিন! আমার তারও ঢের পরে তাই একটি নক্ষত্র ঝরে গেলো; উড়ে গেলো দিঘীর পাড়ে
কি দেবো আজ তোকে— গোলাপ-কাজল নাকি কংকন
তুই বোবার মতো তাকালে মুখ ঢেকে মুছে নিলে
                                                শুকনো চোখের জল


তোকে কাল চিঠি দেবো তাই বৃষ্টিভেজা আজ কাগজ কলম
জন্মদিনে যত্ন করে রাখিস; স্মৃতিসহ ওই বোবা পুতুল


আমি তো দূরে চলে যাবো-দেখবো না কভু আর তোর মিষ্টি মুখে
হাসির ফুল জানিস্ সে কথা ভাবলে ভোররাতে আমাকে
জাগিয়ে তোলে তোর মোলায়েম গালের তিল

কুড়ানো পাথর

একারে মিশে আছো; জবাকুসুমের আশায় তাই কলঙ্ক শুয়ে আছে মধ্যিখানে— পড়োশি পাড়ায়

তোমার অপেক্ষা কেবল জিলিপি প্যাঁচেই জানে
একদিন কি যেন বলেছিলে অনিচ্ছায়; কানে-কানে

অবশেষে কুড়িয়েছি নুড়িপাথর বিচানায়; খাটে

ইচ্ছে

আজ আমি জল শুকাতে দেবো না রোদে
আজ তবে বৃষ্টি নামুক তার মতো করে
আজ একাই ছিঁড়ে নেবো এক টুকরো জল
তুমি কি আমাকে অর্ধেক রোদ পোহাতে দেবে?

কাল তোমাকে আমি ছায়া এনে দেবো—
তোমার হাতের কাছাকাছি অর্ধেক রেখো
রোদটুকু ফেরৎ পাবে

আবার তোমার কাছ থেকে মেঘ চেয়ে নেবো
আজ না হয় কাল— অবধারিত বৃষ্টি এলে

ব্যবহার

রমণীর যন্ত্রণা যতটুকু বুকে কল্পনায় তার অর্ধেক নয় তবু তুমি সাদৃশ্য খুঁজে চলো বাক্য বিন্যাসে ক্রিয়ায়

শব্দ তরঙ্গে স্তব্ধ তুমি-চুমু খেলে শির-শির দেহ কঙ্কাল
আমি ব্যাকরণের পাঠ নিতে এসে দেখি তুমি; তুমি আগুনের মশাল

ধ্বনি-বর্ণের ব্যবহার যেন ঘুমন্ত লিঙ্গের দীর্ঘশ্বাস
ছায়া কুড়োতে এসে দেখি তুমি শিখে ফেলেছো সমাস-বিন্যাস

তুমি যতই সন্ধি বিচ্ছেদ করো; এখনো কারকের ব্যবহার শিখনি
ভাষা শিখিনি আজো; শুধু সন্ধ্যানে ফিরি; এ কথা কভু তোমাকে বলিনি

বেলা-অবেলা

যতটুকু বিশ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো তাকে অনুসরণ করো— কিংবা অনুকরণ করে
কখনো কি ছুঁয়ে দেখেছো হাত, ছায়া মেপে—
প্রকাশ করেছো কি কভু গেঁথে রাখা চোখের ভাষা?
তবে কেনো দৃষ্টিস্ফীত করে খুলে রাখো চোখ আর
আউলা চুলে শুকাচ্ছো জল যেন ঝরে পড়ছে জলজ উষ্ণতা

তোমাকে জাগাতে এসে ভুলে গেছি স্বপ্ন দেখেছি কবে
ওসব বললে হেসে ওঠো বাস্তবতাটুকু
                                            মেনে নিতে পারো না

ফুলপাথর

পাথরের ঘর্ষণে পাথর ফুটুক, অনড় চোখে তোমার স্পর্শ ছাড়া একাকী দীর্ঘ সহবাস ছেড়ে উঠুক স্বপ্ন
                                                           তার মতো করে
ফুল তবে ফুটুক কারো স্পর্শ ছাড়া নিঃস্ব দায়ভার রেখে
ঝরে পড়ুক তুমি ছুঁয়ে দেখার আগে ডালে-ডালে

তোমার দু’হাতে ঝরাফুলের হাসি নিয়ে ফিরেছো; জড়ো করছো
দু’হাতের ঘ্রাণ— আমি তো যত্ন করে কুড়িয়ে এনেছি
                                                    গোলাপের কলি বহু আগে

স্পর্শ করিনি তবু পাথরের ঘর্ষণে পাথর কাঁপে
ফুল ফোটে নিভৃতে ঝরে পড়ে তার মতো করে রোদের তাপে
আজো বাঁধা আমাদের মতো হাজারও প্রাণ সেই পাথর ঘর্ষণ—
                                                              আর ফুলের কাছে